একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনইসির বিবৃতি-বক্তব্য-ভাষা নিয়ে প্রশ্ন কেন?
বাংলাদেশে গত দু’সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই তাদের কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কমিশন কর্মকর্তাদের বক্তব্য এবং ভাষা।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করার পর কমিশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, যেসব বক্তব্য দিচ্ছে - তা নিয়ে সমালোচনায় মুখর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
সোশ্যাল মিডিয়াতেও বহু মানুষ প্রতিদিনই কমিশনের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে তির্যক সব মন্তব্য করছেন। প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বিবিসি বাংলা।
ওই প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়েছে- বিশেষ করে বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবের এক বক্তব্য, তার ভাষার ব্যবহার নিয়ে ফেসবুকে কাটা-ছেড়া চলছে।
কমিশন সচিব পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব এবং অধিকার সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন, ‘তারা মূর্তির মত দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন, কোনো কমেন্ট করতে পারবেন না। ইন্টারভিউ দিতে পারবেন না...।’
তার এই বক্তব্য আর এই নিয়ে সমালোচনা এবং টিকা-টিপ্পনীর ঝড় শুরু হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
১৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট তৎপরতা দেখাচ্ছে, কিন্তু তার পরও কেন প্রতিনিয়ত এ ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের?
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান শারমিন মোর্শেদ লেন, কমিশনের উদ্দেশ্য ঠিক থাকলেও কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করতে না পারার কারণে এইসব বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।
‘ভাষাটাকে পরিবর্তন করা দরকার...যে ভাষাটা তারা ব্যবহার করছে সেটা প্রচণ্ড-ভাবে মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি করছে। যেমন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কথা আমি বলি, তার (সচিবের) কথা যে অমূলক ছিল সেটা না। কিন্তু যে ভাষায় তারা কথা বলছে সেটা হয়ে যাচ্ছে অস্বস্তিকর এবং অগ্রহণযোগ্য।’
নির্বাচন কমিশন পুলিশ প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে কিছু নির্দেশ দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে: তফসিল ঘোষণার পর কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা যাবে না, মামলা করা যাবে না, হয়রানিমূলক মামলা বা গ্রেফতার করা যাবে না।
কিন্তু প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কোনো ভরসা পাচ্ছেনা। তার বার বার বলছে - পুলিশ কথা শুনছে না, এবং নির্বাচন কমিশন পুলিশকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করছে না।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন যেসব আদেশ দিয়েছে তার মধ্যে বেআইনি কিছু নেই, তবে নির্বাচনের আগে তাদের আরো দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
‘তবে হ্যাঁ, কথাবার্তায় উনাদের আরেকটু চোস্ত হতে হবে। আরেকটু সাবধানী হওয়া উচিত। যেমন মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকবেন, এটা না বলে বলতে পারতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবেন। আসলে আইনেও তাই আছে।’
মি শাহনেওয়াজ বলেন, প্রধানত ভাষা প্রয়োগের কারণেই প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। ‘তাদেরকে আরও সাবধানী হতে হবে কারণ সারা জাতি, ভোটাররা তাকিয়ে আছে নির্বাচন কমিশন কখন কী করছে সেটা দেখার জন্য।’
এছাড়া নির্বাচন কমিশনারদের করা বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও লোকজনকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করতে দেখা গেছে।
ব্রতীর শারমিন মোর্শেদ বলছেন, নির্বাচন কমিশনারদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি অনেক মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।
‘নির্বাচন কমিশনের যে অভিজ্ঞতা দরকার সেটা সুদৃঢ় হচ্ছে না। কারণ প্রতিবারই এমন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে যে অতীতের জ্ঞান, তথ্য, দক্ষতা হারিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হওয়ার জায়গায় খুব গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা আছে। নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ বাকি আছে, অথচ নির্বাচন কমিশন আমাদের সুস্থির একটা জায়গায় নিতে পারেনি।’
কেন তারা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন, জানতে একাধিক কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্য করতে চাননি।
No comments