ভারতের অমৃতসরে চলন্ত ট্রেনের নীচে পড়ে অন্তত ৬০ জন নিহত



চিত্রা নিউজ ডেস্ক:ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসরের চৌরি বাজার এলাকায় দশেরার অনুষ্ঠানে রেল লাইনের উপর এবং পাশে দাঁড়িয় রাবণের কুশপুত্তলিকায় আগুন দেয়া দেখার সময় চলন্ত ট্রেনের নীচে পড়ে অন্তত ৬০ জন নিহত এবং আরো অন্তত একশো মানুষ আহত হয়েছে।শুক্রবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটে। অমৃতসরের পুলিশ কমিশনার শুধাংশু শেখ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।খবর বিবিসি এবং ভারতীয় সংবাদ ও গণমাধ্যম সমূহের। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬০ জনের মতো ভর্তি হয়েছে।মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন পুলিশ এবং উদ্ধারকারীরা। দুর্ঘটনার পর রেলরাইনের পাশে হতভম্ব লোকজন
উত্তর রেলের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন,“ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়’টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে অমৃতসর এবং মানেওয়ালার মাঝখানে ২৭ নম্বর গেটের সামনে।
 একটি ডিএমএউ ট্রেন চলে যায় ভিড়ের উপর দিয়ে।” দুর্ঘটনার পরই পুলিশের বিশাল বাহিনী উদ্ধার কাজে নেমে পড়েন। সাহায্য করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উদ্ধারকারীদের একজন বলেন, “ট্রেনটির গতি যথেষ্ট বেশি ছিল। অনেক দেহ লাইন থেকে প্রায় পঞ্চাশ মিটার দূরে ছিটকে গিয়েছে ট্রেনের ধাক্কায়।” স্থানীয় সাংবাদিক রভিন্দর সিং রবীন বলছেন, অমৃতসর শহরের জোরা ফটকের কাছে দশেরা উৎসবে রাবণের কুশপুতুল জ্বালানোর সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে। রেললাইনের ধারে দাঁড়িয়ে যখন বহু মানুষ দশেরা উৎসব দেখছিলেন, সেই সময়েই ট্রেন সেখানে এসে পড়ে। আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, রেল লাইনের উপর এবং পাশে দাঁড়িয়ে দশেরার রাবণ পোড়ানো দেখছিলেন কয়েকশ মানুষ।আর সেই ভিড়ের উপর দিয়েই দুরন্ত গতিতে চলে গেল ট্রেন। দুর্ঘটনার পর নিহত আহতদের ঘিরে মানুষের ভীড় মি সিং জানান, কুশপুতুলে আগুন দেওয়ার সময়ে বাজির আগুন ছিটকে আসতে থাকে।সে সময় মাইকে ঘোষণা করা হয়, দর্শকরা যেন পিছন দিকে সরে যান। দর্শকদের একাংশ সরে লাইনের উপর উঠে আসেন। সেই কথা মতো মানুষ পিছনের একটা রেললাইনের ওপরে চলে গিয়েছিল, তখনই সেখান দিয়ে একটি দ্রুতগামী ট্রেন চলে যায়। ট্রেনের ধাক্কায় বহু মানুষ এদিক ওদিক ছিটকে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আপ এবং ডাউন দুই লাইনেই এক সঙ্গে ট্রেন চলে আসে। তাই কোনও দিকেই সরতে পারেননি দর্শকরা। ট্রেনের চাকার তলায় পিষে যায় একের পর এক মানুষের দেহ। স্থানীয় সাংবাদিকরা যেসব ছবি পাঠিয়েছেন, তা ভয়াবহ। শরীরের নানা অংশ রেল লাইনের আশেপাশে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। 
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, "প্রচুর বাজি ফোটনোর শব্দ হচ্ছিলো, ফলে ট্রেন আসার শব্দ মানুষ শুনতে পায়নি।" তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী, রাবণ দাহ যারা করছিলেন সেই আয়োজকরা অন্তত মানুষকে সতর্ক করতে পারতেন। দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশ কর্মকর্তারা স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলি প্রত্যক্ষদর্শীদের যে বর্ণনা দেখাচ্ছে, সেখানে বলতে শোনা যাচ্ছে যে প্রতি বছরই এই জায়গায় রাবণ পোড়োনো হয় কিন্তু ওই সময়টায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে, বা অতি ধীরে ট্রেন যায়। কিন্তু এবারে ট্রেনটি দ্রুতগতিতে চলে আসে। প্রত্যক্ষদর্শী অমিত কুমার বিবিসিকে জানিয়েছেন, "বহু মানুষ রেল লাইনের ওপরেই ভীড় করে দাঁড়িয়েছিলাম প্রতি বছরের মতোই। রাবন দহন দেখছিলাম, হঠাৎ করেই জোরে ট্রেনটা এসে পড়ল লোকের ওপর দিয়ে চলে গেল। কোনও হর্ণ বাজায় নি, ট্রেনের গতিও কমায় নি একটুও। বন্ধুদের সঙ্গে রাবণ দহন দেখতে জোড়া ফটকে গিয়েছিলেন রবি। বিবিসিকে তিনি বলেন, তার এক বন্ধুকে দুর্ঘটনার পর থেকে খুঁজে পাচ্ছেন না। 
"এত জোরে ট্রেনটা চলে এল, মানুষ সরে যাওয়ার সময়ই পায় নি। হর্ণও দেয় নি।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি অমৃতসরে পৌঁছচ্ছেন ব্যক্তিগতভাবে উদ্ধার কাজ তদারকি করতে। নিহতদের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।



No comments

Powered by Blogger.