কালীগঞ্জে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন
এনামুল হক সিদ্দীক,কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) থেকে ॥
”স্বয়ংসম্পূর্ণ মাছের দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ১৮-২৪ জুলাই “জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০১৮” উদযাপিত হচ্ছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে মৎস্য অফিস কর্তৃক এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মুহম্মদ সাইদুর রহমান রেজা।
সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য কর্মকর্তা জানান, ১৮ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৮ উদযাপিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে উপজেলা মৎস্য দপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৮ জুলাই বুধবার থেকে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মাইকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। ১৯ জুলাই ২য় দিন বৃহঃবার সকাল ৯ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত ব্যানার ফেস্টুন ব্যান্ড পার্টি নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন ও উপজেলা পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে। সাড়ে ১০ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত উপজেলা মিলনাতনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। ২০ জুলাই ৩য় দিন শুক্রবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তরে মৎস্য সেক্টরে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। ২১ জুলাই ৪র্থ শনিবার উপজেলার বিভিন্ন মাছ বাজারে ও নদী ও খাল-বিলে মৎস্য বিষয়ক আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা। ২২ জুলাই ৫ম দিন রবিবারে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে মৎস্য চাষ বিষয়ক আলোচনা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। ২৩ জুলাই ৬ষ্ঠ দিন সোমবার বিভিন্ন হাট বাজার, জনবহুল স্থানে ও বারবাজার মৎস্য আড়ৎ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তরে ও মৎস্য চাষ বিষয়ক উদ্ভুদ্ধকরণ সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। ২৪ জুলাই ৭ম দিন মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তরে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০১৮ মূল্যায়ন, পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান। মৎস্য চাষিদেরকে মাছ চাষে উৎসাহিত করার জন্য চাষিদের মাঝে পুরস্কার প্রদান বিষয়ে আলোচনা। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাছ চাষে অবদান রাখার জন্য এবং মাছ চাষে সফলতা অর্জনকারী ৪ (চার) জন মৎস্য চাষির নাম সভায় উপস্থাপন করবেন। আলোচনা ও পর্যালোচনার পর উক্ত মৎস্য চাষিদের অবদানের জন্য পুরস্কার প্রদান করবেন। যে সকল মৎস্য চাষীদের পুরুষ্কৃত করা হবে তারা হল-উপজেলার সফল মৎস্য চাষি কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারের ভাই ভাই ফিস ফার্মের কবির হোসেন তিনি মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ করে সফল হয়েছেন। উপজেলার সর্জাদ বাওড় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি শ্রী নিরঞ্জন বড় মাছ উৎপাদন করে সফল হয়েছেন। উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের মোঃ মুসা পোনা মাছ উৎপাদন করে সফল হয়েছেন। উপজেলার বালিয়াডাঙ্গার আমিরুল ইসলাম তিনি পাবদা মাছ উৎপাদন করে সফল মাছ চাষি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজা। তিনি আরো জানান, কালীগঞ্জ উপজেলায় মোট আয়তন ৩১০.১৯ বর্গ কিঃমিঃ। এর মধ্যে বেসরকারী পুকুর আছে ৩৬২০ টি, আয়তন ৩৩৬ হেক্টর, মোট মাছ উৎপাদন ১৮৮১.৬ মেঃটন। পুকুর বে-সরকারী (বানিজ্যিক) ১৪৮০ টি, আয়তন ৩৭০ হেক্টর, উৎপাদন ২১০০.৭১ মেঃটন। সরকারী জলাশয় (পুকুর) আছে ৯ টি, আয়তন ৫.৮৭ হেক্টর, উৎপাদন ৩১.১১ মেঃটন। বাওড় সরকারী ৪ টি, আয়তন ৩৮৪.৬৭ হেক্টর, উৎপাদন ১৩৫০ মেঃটন। বে-সরকারী বাওড় আছে ৩ টি, আয়তন ৩৩ হেক্টর, উৎপাদন ১৬৩ মেঃটন। বে-সরকারী বিল আছে ১৩ টি, আয়তন ৩৫০ হেক্টর, উৎপাদন ৮৬৪ মেঃটন। নদি আছে ৩ টা, আয়তন ১৩৬০ হেক্টর, উৎপাদন ৬৮০ মেঃটন। খাল আছে ১১ টি, আয়তন ৭৫ হেক্টর, উৎপাদন ৩৭ মেঃটন।
এ উপজেলায় মোট মৎস্য বাজারের সংখ্যা ৩১টি, আড়ৎ আছে ৩টি, বরফ কল ৮টি, মৎস্য খাদ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ৬টি, এ্যকুরিয়াম বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ৪টি। মৎস্য ব্যবসায়ী আছে ২৫০ জন, মৎস্যজীবি সমিতি ৬টি, কার্ডধারী মৎস্যজীবির সংখ্যা ১৫৪৬ জন, মৎস্য চাষী আছে ৪৮৪৫ জন । মৎস্য চাষী সমিতি (সিআইজি) ২৪টি, মৎস্য চাষী সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪৮০ জন। মৎস্য পোনা নার্সারার ১৪৮ জন।
পোনা উৎপাদন ৫৩৭.৫ লক্ষ, উৎপাদন পোনার চাহিদা ৪৭৫.০ লক্ষ। উপজেলায় মোট মাছের উৎপাদন ৭৭৩৯ মেঃটন, মোট মাছের চাহিদা ৬৬৮৩ মেঃটন, উদ্বৃত্ত্ব ১০৫৬ মেঃটন।
৪ টি সরকারি বাওড়, ৩ টি বে-সরকারি বাওড়, ৫ হাজার ১০৯ টি পুকুর আছে। সেখানে ৪ হাজার ৮৪৫ জন মৎস্য চাষী ও ১ হাজার ৫৪৬ জন জেলে মৎস্য কর্মকান্ডে সাথে জড়িত।
No comments