শসা খাবেন কেন নিয়মিত ?
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিনের ডায়েটে যদি শসাকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তাহলে রোগমুক্ত জীবন পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে সময় লাগে না। কারণ শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে শসার কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো সালাদ হোক কী ঝাল মশলা দেয়া রাজকীয় খাবারই হোক, সবার সঙ্গেই শসাকে সঙ্গী হিসেবে পাঠানো হয়ে থাকে। আর কেন পাঠানো হবে নাই বা বলুন! নিয়মিত এই ফলটি খেলে যে মেলে অনেক উপকার মেলে!
কী কী উপকার পাওয়া যায়? এই প্রকৃতিক উপাদানটির শরীরে রয়েছে একাধিক পুষ্টিকর উপাদান। তাই তো নিয়মিত শসা খেলে ছোট-বড় কোনো রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না যেমন ধরুন...১.কোষ্ঠ কাঠিন্যর (কনস্টিপেশনের) প্রকোপ কমায়: প্রকৃতির ডাক মানেই কি যন্ত্রণার অনুভূতি? তাহলে তো বন্ধু আজ থেকেই শসা খাওয়া শুরু করা উচিত। কারণ এমন ধরনের কষ্ট কমতে বাস্তবিকই শসার কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই সবজিটির অন্দরে উপস্থিত ফাইবার, শরীরের ভিতরে বর্জ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
২. ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়: বর্তমানে ভারতবর্ষে যা পরিস্থিতি তাতে সকলেরই অতিরিক্ত সাবধান থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। কারণ প্রথম সারির গবেষকদের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে প্রতি বছর ভারতবর্ষে নতুন করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ২০২০ সালে আকাশ ছোঁবে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। তাই সেই সব খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত যাতে এই মারণ রোগ দূরে থাকে। আর এক্ষেত্রে শসাকে বাদ দেয়া কোনোভাবেই চলবে না। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শসাতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে থাকে।
৩. শরীরের অন্দরে পানির অভাব হয় না: দেহের অন্দরে পানির মাত্রা স্বাভাবিক থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। না হলে শরীর শুকিয়ে গিয়ে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই তো প্রতিদিন শসা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তাদের মতে শসার শরীরে এত মাত্রায় পানি আছে, প্রায় ৯৬ শতাংশ, যে খুব সহজেই পানির ঘাটতি দূর করে ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশঙ্কা কমানো সম্ভব।
৪. ত্বকের পরিচর্যায় কাজে লাগানো যেতে পারে : শসাতে সিলিকা নামক একটি উপদান রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশ করার পর কোষেদের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি তো পায়েই, সেই সঙ্গে শরীরের প্রতিটি পেশী, লিগামেন্ট ও হাড়ের শক্তিও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এখানেই শেষ নয়, শসা খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে জল পরিমাণ বাড়তে শুরু করে, যার প্রভাবে ত্বকের ভিতরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়। ফলে ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। আর এমনটা হলে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটতেও যে সময় লাগে না, তা বলাই বাহুল্য!
৫. ভিটামিনের ঘাটতি দূর হয় : শরীরকে সচল রাখতে ভিটামিনের প্রয়োজন পড়ে । সেই ভিটামিনের যোগান ঠিক রাখতে শাসা খাওয়া মাস্ট! কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, বি ও এ থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি এনার্জির ঘাটতি দূর করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বল বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. খনিজের ঘাটতি মেটে : খেয়াল করে দেখবেন অনেকেই ত্বকের পরিচর্যায় শসাকে কাজে লাগিয়ে থাকেন। কেন এমনটা করেন, জানেন? আসলে শসার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম,পটাসিয়াম ও সিলিকন। এই সবকটি খনিজ শরীরের উন্নতির পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যদি অল্প দিনেই তরতাজা ত্বক পেতে চান, তাহলে আজ থেকেই কাজে লাগানো শুরু করতে পারেন শসাকে।
৭. পুষ্টির ঘাটতি দূর হয় : ৩০০ গ্রাম শসার প্রায় ১১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২ গ্রাম প্রোটিন, ২ গ্রাম ফাইবার, দিনের চাহিদার প্রায় ১৪ শতাংশ ভিটামিন সি এবং ৬২ শতাংশ ভিটামিন কে থাকে। সেই সঙ্গে থাকে দিনের চাহিদার ১০ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, ১৩ শতাংশ পটাশিয়াম এবং ১২ শতাংশ মেঙ্গানিজ। এই সবকটি উপাদানই আমাদের শরীরের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমনিকা পালন করে থাকে। তাই তো নিয়মিত পরিমাণ মতো শসা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
৮. দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে: খাতায়-কলমে এখন বর্ষাকাল। কয়েকদিন তোলপার করা বৃষ্টি হয়েছিল বটে। কিন্তু অবস্তা যে কে সেই! প্রতিদিন গরম যাচ্ছে বেড়ে। এমন অবস্থায় দেহের তাপামাত্রা স্বাভাবিক রাখতে শসা খাওয়াটা জরুরি। কারণ শসা দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে সানস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, প্রচন্ড তাপদাহের কারণে ত্বক পুড়ে গেলেও শসা লাগাতে পারেন। কারণ পোড়া ভাব কমাতে শসা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৯. শরীরকে বিষমুক্ত করে: শসার শরীরে উপস্থিত বিপুল পরিমাণ পানি দেহের অন্দরে প্রবেশ করা মাত্র ইতি উতি জমে থাকা টক্সিক উপাদনকে ধুয়ে মুছে বার করে দেয়। ফলে শরীরে বিষের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে কোনো ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে।
১০. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: একেবারে ঠিক শুনেছেন ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাস্তবিকই এই ফলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে শসা খাওয়া মাত্র শরীরের অন্দরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১১. ওজন কমে: অতিরিক্ত ওজনের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে সকাল-বিকাল শসা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ শসাতে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান শরীরে মজুত অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
No comments