কালীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী চিত্রা নদীতে এখন মাষছের পরিবর্তে ধানের চাষ
সাঈদুর রহমান,কালীগঞ্জ(ঝিনাইদহ)থেকেঃ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী চিত্রা নদীতে এখন মাছের পরিবর্তে ধানের চাষ করছে কৃষকরা। জেলার প্রায় ১শ ৩০ কিলোমিটার চিত্রা নদীর বুকে স্থানীয় কৃষকরা ধান চাষ করছে। নদীতে পানি না থাকায় অনেকে আবার নদীর তীর সেচের ব্যবস্থা করে এই চাষ শুরু করেছে। কোন কোন স্থানে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতেও দেখা গেছে । ঐহিত্যবাহী চিত্রা নদী লাগামহীন দখলের ফলে নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় ভরা মৌসুমেও চিত্রা পানি থাকে না। যে নদীতে এক সময় বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, ইস্টিমার চলতো সেই নদীতে এখন ডিঙ্গী নৌকা চলার মতো পানিও থাকে না।জানা যায়, চিত্রানদীটি চুয়াডাঙ্গাসহ ৮টি জেলর ২৬টি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খুলনা জেলার রুপসা নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। এই নদীর পানির উপর নির্ভর করে এক সময়ে প্রায় এক লাখ একর জমিতে সেচের আওতায় উচ্চ ফলনশীল ধান, গম, আখ, পাটসহ নানা রকমের সবজি উৎপাদন করা হতো। জেলার কোটচাদপুর ও কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়ে চিত্রা নদী দিয়ে এক সময় ঢাকা,ফরিদপুর,বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা ব্যবসা করতো। এই নদীতে এলাকার মৎসজীবিরা প্রচুর পরিমানের মাছ আহরন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু নদীতে এখন পানি না থাকায় নদীর মধ্যেই ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ শুরু হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর মধ্যে ইরি ধান চাষ করতে দেখা গেছে। নদীর জমিতে মাটি পলি হওয়ায় ফলনও বেশি পাচ্ছে কৃষকরা।
কালীগঞ্জ উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রামের রোস্তম আলী জানান, চিত্রা তো এখন মরা খাল। বর্ষার সময় একটি পানি থাকে আর অন্য সময়ে এই নদী শুকিয়ে চৌচির হয়ে থাকে। যাদের বাড়ি চিত্রার পাড়ে তারা ধানসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে। কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরকোল গ্রামের আমির হোসেন বলেন, এক সময় এই চিত্রায় বড় বড় নৌকা চলতো। ব্যবসায়ীরা নদীর বুক দিয়ে দেশ বিদেশ যেত। কিন্তু চিত্রা নদীর যৌবন আর নেই। বিভিন্ন এলাকায় দখলদারা নদীর পাড়ে দখল করে কেউ পুকুর,কেউ বাড়ি আবার কেউ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নদীর স্রোতে বাধাগ্রস্থ ও সরু খালে পরিনত করেছে। নদীতে যার কারনে ধান চাষ করা হচ্ছে।
চিত্রানদী বাচাঁও আন্দোলনের নেতা ও মানবাধিকার কর্মী শিবুপদ বিশ্বাস জানান, চিত্রা নদীর বিভিন্ন অংশে মানুষ দখল করে রেখেছে। যার কারনে চিত্রা দিয়ে আর পানি প্রবাহিত হয় না। এটি এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। নদীতে পানি না থাকার কারনে নদীর বিভিন্ন স্থানে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হচ্ছে। চিত্রার এপাশ ওপাশের আয়োজন ছিল ২০০ ফুট। বর্তমানে এর আয়োজন মাত্র ৪০ ফিট। শিবুপদ বিশ্বাস আরো বলেন, চিত্রা নদীকে বাচানোর জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন করা হয়েছে। চিত্রা বাচাতে হবে। চিত্রা খনন করতে হবে। চিত্রা নদী বাচাও আন্দোলনের আরেক নেতা এস এম শাহীণ হোসনে জানান, চিত্রাকে বাচানোর জন্য ৭ দফা দাবি ছিল। তারা স্থানীয় মানুষদের নিয়ে মানববন্ধনে এই দাবিগুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছিলেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার রায় জানান, চিত্রা নদীর বিভিন্ন অংশ প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিত্রা নদীর ম্যাপ, জমির সীমানা নির্ধারন কাজ শুরু করা হয়েছে। চিত্রা নদী বাচাও একটি কমিটিও আছে। চিত্রানদীকে খনন করে পুনরায় এই নদী আগের অবস্থানে ফিলিয়ে আনা হবে এবং চিত্রাকে খুব শিঘ্রই দখলমুক্ত করা হবে ইউএনও উত্তম কুমার জানান।
No comments