ঢাকার মিরপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত পুলিশের পরিদর্শক জালাল উদ্দিনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম ।
চিত্রা নিউজঃ ঢাকার মিরপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত পুলিশের পরিদর্শক মৃত জালাল উদ্দিনের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম, দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা। স্বজনরা জানান, তিন মাস আগে জালাল উদ্দিন বাড়িতে এসেছিলেন, ছুটি পেলেই আবার তিনি বাড়ি ফিরবেন বলেছিলেন, কিন্তু এখন লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
গত সোমবার দিনগত রাতে মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগ এলাকায় একটি বাসায় অস্ত্র উদ্ধারে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলার মুখে পড়ে ডিবি পুলিশের একটি দল। এতে জাহাঙ্গীর ওরফে জালাল উদ্দিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। আশঙ্কাজনক অব্স্থায় তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ পরিদর্শক জালাল উদ্দিন ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোলপাড়া গ্রামের মৃত বিশারত মণ্ডলের ছেলে। ওসি জালালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা মা আয়েশা বেগম (৮০) ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। পরিবারের বাকি সদস্যরা অনেকটা বাকরুদ্ধ। পাড়া-প্রতিবেশীরা এসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই থামছে না মা ও স্বজনদের আহাজারি। সান্ত্বনা দিতে আসা প্রতিবেশীরা তাদের শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন।
জালাল উদ্দিনের মেজো ভাই আলা উদ্দিন জানান, তারা পাঁচ ভাই ও দুই বোন। এর মধ্যে জালাল উদ্দিন সেজো। কালীগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন। এরপর পুলিশে চাকরি নিয়ে ঢাকা চলে আসেন। চাকরিরত অবস্থায় জালাল উদ্দিন এইচএসসি ও বিএ পাস করেন এবং পুলিশ বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে পর্যায়ক্রমে এএসআই, এসআই ও সর্বশেষ ওসি পদে পদোন্নতি পান। চাকরিকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কারও গ্রহণ করেন।
আলা উদ্দিন আরও জানান, পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে জালাল উদ্দিন ছাড়া বাকিরা সবাই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত।
জালাল উদ্দিন কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার রসুলপুর গ্রামের রফি উদ্দিন মাস্টারের মেয়ে রীনা পারভিনকে বিয়ে করেন। তার তৃপ্তি ও তুর্যা নামে দুই মেয়ে আছে। বড় মেয়ে তৃপ্তি ও ছোট মেয়ে তুর্যা দু’জনই ঢাকার ভিকারুন্নেছা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশুনা করে।
জালাল উদ্দিনের মা আয়েশা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘৩-৪ মাস আগে আমার ছেলে ওসি হয়েছে। তিন মাস আগে সে বাড়িতে আসে। যাবার সময় বলে যায়, আবার ছুটি পেলে বাড়িতে আসবে কিন্তু তার আর বাড়ি আসা হলো না ।
স্বজনরা জানান, তারা জালাল উদ্দিনের নিহত হওয়ার খবর পান সকালে, এরপর জালাল উদ্দিনের বড় ভাই জামাল উদ্দিন মাইক্রোবাস নিয়ে লাশ নেওয়ার জন্য ঢাকার পথে রওনা দেন।
আলা উদ্দিন জানান, বেলা আড়াইটার দিকে কালীগঞ্জের উদ্দেশে ঢাকা থেকে জালাল উদ্দিনের লাশ নিয়ে রওনা হয়েছেন জামাল উদ্দিন। তবে লাশ কালীগঞ্জে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যেতে পারে।
স্বজনরা জানান, জালাল উদ্দিনকে পৈতৃক বাড়ির পাশের বাঁশবাগান সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
No comments