ঝিনাইদহে ১৩০ টি ইটভাটার ১১২ টির অনুমোদন নেই অবৈধ ভাটায় পুড়ছে লক্ষ লক্ষ মন কাঠ
শাহজাহান আলী সাজু কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) থেকে ॥
ঝিনাইদহ জেলায় ১৩০ টি ইটভাটায় চলতি মৌসুমে ১ কোটি ৩০ লাখ মন কাঠ পোড়ানো হবে। যে ভাটাগুলো পরিবেশের ক্ষতি করে এই বিপুল পরিমান কাঠ পোড়াবে তার মধ্যে ১১২ টিরই কোনো অনুমোদন নেই বাকি ১৮ টি ভাটার মালিক অনুমোদন নিলেও তারাও জ্বলানী হিসেবে কাঠের ব্যবহার করছেন। ২/৪ টি ভাটা কর্তৃপক্ষ কয়লা ব্যবহার করলেও পাশাপাশি কাঠের ব্যবহারও অব্যহত রেখেছেন। ভাটা মালিকদের ভাষ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরকে খুশি রেখেই তারা এই কাঠ পুড়িয়ে থাকেন।
ভাটা মালিকদের একটি সুত্র জানায়, নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে ইট পোড়ানো মৌসুম। সাধারণত এক চিমনির ভাটায় মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ লাখ ও দুই চিমনিতে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট পোড়ানো যায়। গড় হিসাবে এ বছর ঝিনাইদহের প্রতিটি ভাটায় ৫০ লাখ করে ইট পোড়ানো হবে।
ভাটার মালিকদের হিসাব অনুযায়ী এক লাখ ইট পোড়াতে দুই হাজার মন কাঠ প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে ৫০ লাখ ইট পোড়াতে লাগবে এক লাখ মন কাঠ। আর ১৩০ টি ভাটায় পুড়বে এক কোটি ৩০ লাখ মন কাঠ। এর পুরোটাই জোগাড় হবে বন কেটে যা পরিবেশের জন্য মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক মাসুদ আহম্মদ সনজু।
জেলা বন কর্মকর্তা খন্দকার গিয়াস উদ্দিন জানান, ভাটা স্থাপন বা ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। এছাড়া ১২০ ফুট উচুঁ চিমনি তৈরীর নিয়ম রয়েছে। ব্যারেল চিমনি কোনো ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। কয়লা পোড়ানোর উপযোগি জিকজ্যাক ভাটা হতে হবে গ্রামের মধ্যে, ফসলি জমিতে বা জনবসতি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন দন্ডনিয় তিনি জানান, জ্বলানী হিসেবে কাঠ পোড়ানো যাবে না মর্মে অঙ্গীকার নিয়ে ইট ভাটার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ এসব নিয়ম মানতে চান না। আর জনবলের অভাবে তারাও সব সময় অভিযান পরিচালনা করতে পারেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হরিনাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর এলাকায় এমএস ব্রিকস্ এর মধ্যে করাতকল বসিয়ে নিয়ে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। একই উপজেলার রুমা ব্রিকস্ কাঠ ব্যবহার করছেন। সদর উপজেলার রামনগর গ্রামে পাল ব্রিকস্ ভাটার পাশে করাতকল বসিয়ে নিয়েছেন। তারাও কাঠ ব্যবহার করছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর মাঠে অবস্থিত একটি ইটভাটা ব্যপকভাবে কাঠ পোড়াচ্ছেন। কোটচাঁদপুর উপজেলার সাব্দালপুর বাজারের পাশে অবস্থিত রানা ব্রিকস্ জ্বলানী হিসেবে কাঠ পোড়াচ্ছেন।
একাধিক কাঠ ব্যবসায়ী জানান, ঝিনাইদহের বেশ কয়েকটি ভাটায় করাতকল রয়েছে, যা অনেকের নজরে আসেনি। সকলের চোখ এড়িয়ে তারা ভাটার মধ্যে করাতকল বসিয়ে কাঠ কেটে যাচ্ছেন। ইটভাটার এক মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কয়লা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলা মোকাবেল করতে হয়। তাছাড়া কয়লা নগদ টাকায় ক্রয় করতে হয়, আর কাঠ বাকিতে কেনা যায়। এলাকার একাধিক কাঠ ব্যবসায়ী জানান, জেলার বেশির ভাগ ইট ভাটায় তারা কাঠ সরবরাহ করছে। অপর এক ভাটার মালিক জানান, তারা অনেককে খুশি করে এভাবে কাঠ ব্যবহার করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, এই সকল ভাটার বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যহত আছে। গত সপ্তাহে শৈলকুপার তিনটি ভাটা মালিককে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আরো অভিযান চলবে বলে তিনি জানান। আর পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির ঝিনাইদহ জেলা আহবায়ক মাসুদ আহম্মেদ সনজু জানান, এই অভিযান যেন লোক দেখানো না হয়। তারা যেন আইন মানতে বাধ্য হন এবং বন উজাড় বন্ধ হয়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের আরো কঠোর হওয়া জরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন। অবশ্য পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, তারা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। গত সপ্তাহে মাগুরা জেলায় অভিযান পরিচালনা করেছেন। ঝিনাইদহে এই সকল ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
No comments